
ব্যবস্থাপনা
সংগঠন কাকে বলে? সংগঠনের গুরুত্ব বা প্রয়োজনীয়তা আলোচনা কর।
যেকোনো ব্যবসায়িক কাজ বা সামাজিক কাজে সফলতার জন্য প্রয়োজন একটি সংগঠন। সংগঠনে যত শৃঙ্খলা ও কার্য তৎপরতা থাকে, সংগঠন তত প্রাতিষ্ঠানিক লক্ষ্য অর্জনে সফল হয়। আজকের আলোচনার বিষয়বস্তু সংগঠন কাকে বলে বা সংগঠন কি তথা সংগঠনের সংজ্ঞা এবং সংগঠনের গুরুত্ব ও প্রয়োজনীয়তা ইত্যাদি।
সংগঠন কাকে বলে?
সংগঠনের সংজ্ঞা
সংগঠনের গুরুত্ব ও প্রয়োজনীয়তা
১. উদ্দেশ্য অর্জনে সহায়তা
২. উপকরণের কাম্য ব্যবহার
৩. মানব শক্তির সর্বোত্তম ব্যবহার
৪. শৃঙ্খলা প্রতিষ্ঠা
৫. বিশেষীকরণের সুবিধা
৬. সমন্বয় সাধনে সহায়তা
৭. উৎপাদন বৃদ্ধি
৮. নেতৃত্ব প্রতিষ্ঠা
৯. সহযোগিতা বৃদ্ধি
১০. পারস্পরিক সমঝোতা বৃদ্ধি
১১. সহজে প্রশাসনিক কার্যাবলি সম্পাদন
১২. নিয়ন্ত্রণে সহায়তা
সংগঠন কাকে বলে?
সংগঠন মূলত একটি নিয়মতান্ত্রিক কাঠামো। সংগঠন হলো প্রাতিষ্ঠানিক লক্ষ্য অর্জনের জন্য প্রয়োজনীয় উপকরণগুলোর সমন্বয় সাধন ও সুগঠিত করার প্রক্রিয়া। ব্যাপক অর্থে, যে প্রক্রিয়ার মাধ্যমে প্রতিষ্ঠানের লক্ষ্য অর্জন ও পরিকল্পনা বাস্তবায়নের জন্য প্রয়োজনীয় উপকরণ বা উপাদানগুলো সংগ্রহ, শ্রম বিভাগ, দায়-দায়িত্ব বিশ্লেষণ ও নির্ধারণ, ক্ষমতার্পণ, শ্রেণীবদ্ধকরণ, সমন্বয় সাধন এবং কর্মীদের মধ্যে উদ্দেশ্যভিত্তিক সম্পর্ক নির্ণয় করা হয়, তাকে সংগঠন বলে।
সংগঠনের সংজ্ঞা:
বিভিন্ন বিশেষজ্ঞ সংগঠনের বিভিন্ন সংজ্ঞা প্রদান করেছেন। নিচে কয়েকটি উল্লেখ করা হলো-
১. “সংগঠন হলো এমন একদল পরিচিত ব্যক্তিবর্গ যারা লক্ষ্য অর্জনের জন্য নিজেদের প্রচেষ্টা কাজে লাগায়।” – অধ্যাপক ম্যাক ফারল্যান্ড।
২. “কোন নির্দিষ্ট উদ্দেশ্য বা উদ্দেশ্যাবলি অর্জনের জন্য বিশেষ বিশেষ অংশসমূহের সুষ্ঠুভাবে সমন্বয় সাধনকে সংগঠন বলে।” – প্রফেসর এল. এইচ. হ্যানি।
৩. “সংগঠন হলো একটি সম্পর্কের কাঠামো যার মাধ্যমে একটি প্রতিষ্ঠানের শক্তিসমূহ একত্র হয় এবং যে কাঠামোর ভিতর ব্যক্তির প্রচেষ্টাবলি সমন্বিত হয়।” – কুঞ্জ এবং ওডোনেল।
অতএব, সংগঠন কাকে বলে তা উপরের আলোচনার আলোকে এভাবে বলা যায়, যে প্রক্রিয়া বা পদ্ধতির মাধ্যমে প্রতিষ্ঠানের লক্ষ্য অর্জন ও পরিকল্পনা বাস্তবায়নের লক্ষ্যে বিভিন্ন উপকরণ সংগ্রহ, উৎপাদন ও বণ্টন, কর্মীদের ঐক্যবদ্ধ ও সুসংগঠিতকরণ এবং তাদের কর্তব্য, দায়িত্ব ও কর্তৃত্ব এবং পারস্পরিক সম্পর্ক জানানো ও ব্যাখ্যাকরণ সংক্রান্ত কার্যাদি সম্পাদিত হয়, তাকে সংগঠন বলে।
সংগঠনের গুরুত্ব ও প্রয়োজনীয়তা
অধিকতর ফলপ্রসূতার সাথে সময়মত প্রাতিষ্ঠানিক উদ্দেশ্য বাস্তবায়নের লক্ষ্যে সংগঠন প্রত্যেক ব্যক্তি বা বিভাগের কাজের মধ্যে সমন্বয় সাধন করে। এত সহজে প্রাতিষ্ঠানিক লক্ষ্য অর্জন করা সম্ভব হয়। তাই দক্ষতা ও যোগ্যতার সাথে কার্যসম্পাদন করে প্রাতিষ্ঠানিক লক্ষ্যার্জনে সংগঠন গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখে। নিচে সংগঠনের গুরুত্ব ও প্রয়োজনীয়তা আলোচনা করা হলো-
১. উদ্দেশ্য অর্জনে সহায়তা
সংগঠন উদ্দেশ্যাবলি অর্জনে সহায়তা করে। সংগঠন কার্যবিভাগের মাধ্যমে প্রত্যেকের দায়িত্ব ও কর্তব্য নির্দিষ্ট করে দেয়, উদ্দেশ্য অর্জনের উপায় নির্দেশ করে এবং অগ্রগতি মূল্যায়নের ব্যবস্থা করে। এর ফলে উদ্দেশ্য অর্জন সহজ হয়।
২. উপকরণের কাম্য ব্যবহার
কার্যকর সংগঠনের মাধ্যমে মানবীয় ও অমানবীয় সকল উপকরণের কাম্য ব্যবহার নিশ্চিত করা যায়। সংগঠন বিশেষজ্ঞতার ভিত্তিতে কার্যবণ্টনের ব্যবস্থা করে। এটি যে কাঠামো তৈরি করে দেয় তার ফলে জনশক্তি ও বস্তুগত সম্পদের সর্বোত্তম ব্যবহার নিশ্চিত হয়।
৩. মানব শক্তির সর্বোত্তম ব্যবহার
প্রাতিষ্ঠানিক উদ্দেশ্য বাস্তবায়নের সাথে সংশ্লিষ্ট কাজগুলোকে সংগঠনের মাধ্যমে দক্ষ ও যোগ্য কর্মীর উপর ন্যস্ত করা হয়। তাছাড়া এ ব্যবস্থায় দায়িত্বপ্রাপ্ত কর্মী অর্পিত দায়িত্ব সম্পর্কে বিশেষ জ্ঞানের অধিকারী এবং সচেতন বিধায় সে পূর্ণ শক্তি, দক্ষতা ও যোগ্যতা দিয়ে কার্যসম্পাদন করতে পারে। এতে মানব শক্তির উপযুক্ত ব্যবহার সুনিশ্চিত হয়।
৪. শৃঙ্খলা প্রতিষ্ঠা
কার্য বণ্টন সঠিকভাবে না হলে সংগঠনে বিশৃঙ্খলা ও অব্যবস্থাপনা দেখা দেয়। সুষম সংগঠনে দায়িত্ব ও কর্তৃত্ব পরিষ্কারভাবে সংজ্ঞায়িত থাকে। কে কতটুকু দায়িত্ব পালন করবে, কে কার নিকট জবাবদিহি করবে ইত্যাদি সুস্পষ্ট থাকে বিধায় কার্যক্ষেত্রে শৃঙ্খলা প্রতিষ্ঠিত হয়।
৫. বিশেষীকরণের সুবিধা
সুষ্ঠু সংগঠনের মাধ্যমে প্রতিষ্ঠানের বিভিন্ন কার্যাবলি এদের প্রকৃতি অনুযায়ী বা সুবিধাজনকভাবে বিভাজন করা হয়। কার্যকর শ্রমবিভাগ প্রতিষ্ঠার ফলে নির্বাহীগণ ও কর্মীগণ দক্ষভাবে এবং মিতব্যয়িতা ও সাফল্যের সাথে কার্য সম্পাদন করেন।
৬. সমন্বয় সাধনে সহায়তা
প্রতিষ্ঠানের কাজগুলোকে সংগঠনের মাধ্যমে প্রকৃতি অনুযায়ী ভাগ করে প্রতিষ্ঠানের বিভিন্ন বিভাগ ও উপবিভাগে নিয়োজিত কর্মীদের উপর অর্পণ করা হয়। ফলে প্রতিটি কর্মী অর্পিত দায়িত্ব সম্পর্কে সজাগ দৃষ্টি রেখে কার্যসম্পাদন করে।
৭. উৎপাদন বৃদ্ধি
সংগঠনের মাধ্যমে ব্যবস্থাপনা মানবীয় এবং অমানবীয় উপাদানগুলোর সঠিক ব্যবহার নিশ্চিত করে। এতে উৎপাদনের উপকরণের কোনোরূপ অপচয় হয় না। ফলে প্রতিষ্ঠানের উৎপাদন বৃদ্ধি পায়।
৮. নেতৃত্ব প্রতিষ্ঠা
সংগঠনের মাধ্যমে সুনির্দিষ্টভাবে দায়িত্ব ও কর্তৃত্ব নির্ধারণ করা হয়। এতে কেউ দায়িত্ব অবহেলা করলে সহজে শাস্তিমূলক ব্যবস্থা গ্রহণ করা যায়। এক্ষেত্রে শাস্তির ভয়ে কর্মীরা স্বতঃস্ফূর্তভাবে কাজে মনোনিবেশ করে। ফলে সংগঠনে সঠিক ও আদর্শ নেতৃত্বের বিকাশ ঘটে।
৯. সহযোগিতা বৃদ্ধি
দায়িত্ব-কর্তব্যসহ সংগঠন কর্মীদের পারস্পরিক সম্পর্কের ব্যাখ্যা দান করে। এতে সংগঠনে নিয়োজিত কর্মীদের মধ্যে সমঝোতা প্রতিষ্ঠিত হয়। ফলে সংশ্লিষ্ট সকলের পক্ষে সহযোগিতা বৃদ্ধি করে কার্যসম্পাদন করা সম্ভব হয়।
১০. পারস্পরিক সমঝোতা বৃদ্ধি
সাংগঠনিক কাঠামো প্রণয়নকালে প্রতিটি স্তরে নির্বাহীদের মধ্যে পারস্পরিক সম্পর্ক সম্বন্ধে সুস্পষ্ট ধারণা দেওয়া হয়। এমতাবস্থায় প্রতিটি নির্বাহী তাঁর উপর অর্পিত দায়িত্ব সম্বন্ধে সতর্ক থাকেন। এতে নিজেদের মধ্যে ভুল বুঝাবুঝির কোনো অবকাশ থাকে না। ফলে সকলের মধ্যে পারস্পরিক সমঝোতা বৃদ্ধি পায়।
১১. সহজে প্রশাসনিক কার্যাবলি সম্পাদন
উত্তম সাংগঠনিক কাঠামোর আওতায় প্রত্যেক কর্মী দায়িত্ব ও কর্তব্য নিজস্ব অবস্থান এবং পারস্পরিক সম্পর্ক সম্বন্ধে অবগত থাকে। এতে প্রতিষ্ঠানে নিয়োজিত কর্মীবৃন্দের মধ্যে ভুল বুঝাবুঝির অবকাশ থাকে না। ফলে প্রশাসনের পক্ষে সহজ ও সুশৃঙ্খলভাবে ব্যবসায়ের গঠন ও উন্নয়নমূলক কার্যাবলি সম্পাদন করা সম্ভব হয়।
১২. নিয়ন্ত্রণে সহায়তা
উত্তম সংগঠনে দায়িত্ব ও কর্তৃত্ব সীমা নির্দিষ্ট থাকে। কে কার কাছ থেকে নির্দেশ পাবে এবং কার কাছে কাজের জন্য জবাবদিহি করবে ইত্যাদি সুস্পষ্টভাবে উল্লেখ থাকে। ফলে সংগঠনে জবাবদিহিমূলক প্রশাসন ব্যবস্থা গড়ে উঠে এবং নিয়ন্ত্রণ সহজ হয়ে উঠে।
“নিবেদক”
সাংবাদিক নেতারা